Menu

উন্নয়ন বনাম পরিবেশ pdf


Last Update : February 15, 2022

ভূমিকা

জনসংখ্যা, দারিদ্র্য এবং অবনমন—এগুলি একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিপন্ন পরিবেশ—বর্তমান পৃথিবীর প্রধান তিনটি সমস্যা। এই তিনটি সমস্যাই একে অপরের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্কে অন্বিত। আমরা এই সম্পর্ককে দুভাগে ভাগ করতে পারি- জনসংখ্যা বনাম উন্নয়ন এবং উন্নয়ন বনাম পরিবেশ। অর্থাৎ জনসংখ্যার প্রয়োজনে উন্নয়ন প্রয়োজন এবং এই উন্নয়নের ফলে বাড়তে থাকে পরিবেশের অবনমন। উন্নয়নের প্রথম ধাপে মানুষের চাহিদা কম থাকে বলে পরিবেশকে সেই উন্নয়ন বিশেষ ব্যাহত করে না। তবে মানুষের চাহিদা যখন বাড়ে তখন স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধির জন্য পরিবেশের দূষণ ও ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে থাকে। ফলে সৃষ্টি হয় সমস্যার। যে সমস্যা আজ পৃথিবীব্যাপী।

উন্নয়নের ধারণা

‘উন্নয়নে’র ইংরাজি প্রতিশব্দ ‘ডেভেলপমেন্ট’ (Development)-কে বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায় মানুষকে সম্পূর্ণভাবে বিকাশ বা উন্নত করা । এই উন্নয়নের জন্য পরিবেশকে আরো বেশি করে ভোগ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় , ফলে পরিবেশের ধ্বংসজনিত কারণে অবনমনের মাত্রাও বাড়তে থাকল। যেহেতু প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ উন্নয়নের ফলে সীমিত হয়ে এল, ফলে উন্নয়ন পরিবেশকে আঘাত করল। অর্থনীতির সূত্র অনুযায়ী, উন্নয়নের গতি যত বাড়ে ততই পরিবেশের ক্ষতি হয়। তাই উন্নয়নের ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তাকে বলা যেতে পারে পরিবেশ উন্নয়ন আন্তঃসম্পর্ক। এই সম্পর্কের নিরিখে উন্নয়নের স্তর এমন অবস্থায় পৌঁছায় যেখানে পরিবেশের ব্যবহার ও ক্ষয়ক্ষতি সর্বাপেক্ষা বেশি। এর পরেও উন্নয়ন ঘটলে বেশি পরিবেশ-ব্যবহারী দ্রব্য সেবা প্রভৃতি, যাকে পরিবেশ নিবিড় সামগ্রী বলা হয় তার ব্যবহার কমে। পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি, দূষণ ইত্যাদির নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, জমি ও অরণ্যজাত দ্রব্য এবং প্রাণীর ব্যবহার কমে যায় বলে পরিবেশের উপর তার প্রভাব পড়ে।

আরো পড়ুন-  বন, বন্যপ্রাণী ও মানব জীবন PDF

অনলাইনে প্রবন্ধ পত্র প্রতিবেদন রচনা

প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার

পরিবেশের অবনমন উন্নয়নের গতিকে নিম্নমুখী করে। যেভাবে পরিবেশে জলবায়ু পরিবর্তন, তাপ বৃদ্ধি, ওজোনস্তরের হ্রাস, সমুদ্রতলের নাব্যতা হ্রাস, অরণ্য ধ্বংস, চিরাচরিত প্রাকৃতিক শক্তির নিঃশেষণ, কৃষি জমির উর্বরতা হ্রাস, বায়ুদূষণ-জলদূষণ, বৃষ্টিপাতের হ্রাস এবং পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের হ্রাস ঘটছে তাতে বর্তমান উন্নয়নকেও ধরে রাখা যাবে না। এমনকি কোনো প্রজন্মের মানুষ যদি পরিবেশকে অতিরিক্ত ব্যবহার করে তার প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে তবে পরের প্রজন্মের মানুষ তাদের ভালো থাকার প্রচলিত অবস্থা রক্ষা করবার উপাদান হিসেবে যথেষ্ট পরিবেশ সম্পদ ও উপাদানের বস্তু শক্তি পাবে না। এর ফলে আগের প্রজন্মের বেশি ভালো থাকার কারণে পরবর্তী ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ততটা ভালো থাকা সম্ভব হবে না।

পরিবেশের পরিবর্তন

উন্নয়নের ফলে পরিবেশের যে পরিবর্তন হচ্ছে তার ফলে তিনটি স্তরে তার প্রভাব পড়ছে। যেমন, প্রথম স্তরে প্রভাবিত হচ্ছে স্বাস্থ্য, দ্বিতীয় স্তরে প্রভাবিত হয় নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য সুযোগ-সুবিধা ও সৌন্দর্যবোধ এবং তৃতীয় স্তরে প্রভাবিত হয় বাস্তুতন্ত্র ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য। বিশেষ করে ‘দারিদ্র্য’ স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে এবং সেই দারিদ্র্য পরিবেশকে বিঘ্নিত করেছে। যেমন, দারিদ্র্যের জন্য বন থেকে কাঠ চুরি, অসচেতনতা, অশিক্ষা, সংস্কারাচ্ছন্ন হওয়া প্রভৃতি দিকগুলি একাধারে পরিবেশ ও উন্নয়নকে ব্যাহত করেছে। আবার দ্বিতীয় স্তরে জনসংখ্যার বৃদ্ধির ফলে বসবাস ও খাদ্য সমস্যার নিরসনে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অবধারিত হওয়ায় দ্রুত উন্নয়ন ঘটাতে গিয়ে সেই উন্নয়ন পরিবেশের উপর নানান বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

অনলাইনে প্রবন্ধ পত্র প্রতিবেদন রচনা

উন্নয়নের স্বরূপ

সভ্যতার বিকাশে মানুষ একদিন এই প্রকৃতি ও জীবজন্তুর সঙ্গে সহাবস্থান করেই নিজেদের সভ্য করে তুলেছিল। কিন্তু সভ্য মানূষ একসময় ভুলে গেল প্রকৃতি ও জীবজন্তুর কথা। তখন উন্নয়নের নামে পরিবেশের ক্ষতিসাধন চলতেই থাকল। দুঃশাসনের দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের মতো অতিরিক্ত ভোগাকাঙ্ক্ষী মানুষ প্রকৃতির সম্পদ যথেচ্ছভাবে হরণ করতে থাকল। ফলে উন্নত মানুষের কাছে প্রকৃতি ফিরিয়ে দিল সুনামি, হ্যারিকেন, ভূমিকম্প, পৃথিবীর উষ্ণকরণ, অম্লবৃষ্টি, ওজোনস্তর হ্রাসের মতো ঘটনাকে। তাই উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিবেশের অবনমনকে প্রতিহত করতে প্রয়োজন :

আরো পড়ুন-  প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মানুষের অসহায়তা pdf

(ক) ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে কাম্য জনসংখ্যায় পরিণত করা। (খ) সার্বিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও সদিচ্ছার বিকাশ সাধন। (গ) ধনী দেশগুলির উচিত- ক্ষতিকারক গ্যাস উৎপাদন নিয়ন্ত্রিত করা ও উন্নয়নশীল দেশগুলির পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাশে এসে দাঁড়ানো ও যথাযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ। (ঘ) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা। যেমন, সূর্যশক্তি, তাপশক্তি, জোয়ারশক্তি, বায়ুশক্তিকে বেশি করে কাজে লাগানো। (ঙ) ভাণ্ডার নিঃশেষ হয়ে গেলে নতুন করে ভাবব—এই নীতিকে বর্জন করে যাতে নতুন প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার আশু গড়ে ওঠে তার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পদক্ষেপ। (চ) বিভিন্ন বর্জ্য থেকে কিভাবে নতুন সম্পদ তৈরি করা যায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ। (ছ) বায়ু, জল, মাটি দূষণকারী বস্তু সম্পর্কে সচেতন হয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া। (জ) আধুনিক জীবনের অতিমাত্রায় ভোগপ্রবণতা কমিয়ে ফেলা ও কৃত্রিমতা যতটা সম্ভব পরিহার করে শ্রমশীল হওয়া। (ঝ) পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট সমস্ত দপ্তর ও মন্ত্রকের সঙ্গে পারস্পরিক যোগসাধন। (ঞ) পরিবেশ রক্ষার কথা বলার সঙ্গে পৃথিবীর সমস্ত মানুষের অন্ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতির সহজলভ্যতার উপর জোর দেওয়া হবে উন্নয়নের অন্যতম সূত্র।

উপসংহার

জলে নামবো অথচ বেণী ভেজাবো না—এ যেমন সম্ভব নয়, তেমনি উন্নয়নও চলতে থাকবে কিন্তু পরিবেশের অবনমন হবে না—তাও যথার্থ নয়। তাহলে করণীয় কী? মানুষের হাতেই তার চাবিকাঠি আছে। দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের মাধ্যমে, উন্নয়নের সংরক্ষণশীল সূত্রের মাধ্যমে পরিবেশকে যথাসম্ভব অল্প ব্যবহার কিম্বা অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহার করা অথবা ব্যবহারের পর সেই শক্তিকে পুনরায় নবীকরণের মাধ্যমে নতুন শক্তি সৃষ্টি করলে পরিবেশও বাঁচবে আর উন্নয়নও ব্যাহত হবে না।

‘উন্নয়ন বনাম পরিবেশ’ অনুসরনের লেখা যায়

* পরিবেশের অবনমন ও তার প্রতিকার * উন্নয়ন ও পরিবেশের অবনম *

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!