Menu

একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, Best Unique 7 Points, PDF


ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

ভূমিকা

তাজমহল দেখার সাধ আমার অনেক দিনের। শৈশবাবধি তাজমহলের ছবি দেখেছি অনেক, তার সম্পর্কে রচিত কত কবিতা পড়েছি, শুনেছি কত মন-পাগল-করা গান। ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত, কত কবিতা-মর্মরিত ও সংগীত-মুখরিত সেই পবিত্র সমাধি-মন্দির তাজমহল দেখার ব্যাকুলতা হৃদয়ের মর্ম-গভীরে বহুকাল থেকে ছিল সঞ্চিত। অবিস্মরণীয় অমূল্য সেই স্মৃতিসৌধ দর্শনের জন্য হৃদয়ের ব্যাকুলতাকে আর উপেক্ষা করা যায় না। তাই বহুকাল সঞ্চিত সেই দর্শনেচ্ছা পূরণের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছি।

যাত্রা শুরু

সেবারের পূজার ছুটিতে এল সেই দুর্লভ সুযোগ। আনন্দের উত্তেজনায় আমার তো রাত্রির নিদ্রা তিরোহিত হল। তাজমহলের অনুধ্যানে এবং রবীন্দ্রনাথের ‘শাজাহান’ কবিতার মর্মরিত ব্যঞ্জনার মুগ্ধতায় কেটে যায় আমার দিন। অবশেষে এল সেই নির্ধারিত যাত্রার দিন। হাওড়া স্টেশন থেকে “হাওড়া-বিকানির” ট্রেনটি ছাড়ল। দু’পাশে শারদীয়া শুক্লা দ্বাদশীর আদিগন্ত জ্যোৎস্না আমার কিশোর মনকে যেন এক সুদূরের মায়ামন্ত্রে আবিষ্ট করে রেখেছে। ট্রেনে জানালার ধারের আসনটি ছিল আমার সম্রাট শাজাহানের ‘ময়ূর সিংহাসন’ তুল্য। রাস্তার ধারের নয়ানজুলির জলের দর্পণে চাঁদের প্রতিচ্ছবি। এ যেন তাজমহল দেখতে যাবার এক অনবদ্য ভূমিকা।

ট্রেনে অভিজ্ঞতা

অল্পক্ষণ পরেই এল আমাদের নৈশ-আহার। খাওয়ার পরে সবাই পড়ল ঘুমিয়ে। কিন্তু আমার চোখে ঘুম এল না। আমার মনের মধ্যে তাজমহল, শাহজাহান, স্মৃতির মণিকোঠায় রবীন্দ্রনাথের কবিতার ভাব-ব্যঞ্জনা ঘুমোতে দিল না আমাকে।

“তুমি নিশ্চয়ই আগ্রায় নামবে?” – সহসা এই অতর্কিত প্রশ্নে বিচলিত হয়ে পিছন ফিরে তাকালাম। একটি যুবক। আমার চেয়ে বয়েসে বড়ো; কিন্তু বলিষ্ঠ গড়ন সপ্রতিভ দু’চোখের দৃষ্টি, তাতে প্রচ্ছন্ন এক আশ্চর্য কৌতুকের ঝিলিক। “তুমি জানলে কী করে যে আমি আগ্রায় নামব?” সে হাসতে লাগল এক ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি : “দেখলেই বোঝা যায়-তাজমহলের যাত্রী। আমিও যেবার আগ্রায় যাই, ঠিক তোমার মতো হয়ে যাই।” জিজ্ঞাসা করলাম, “তুমি কোথায় যাচ্ছ? আগ্রা নয়?” সে তেমনি উত্তর করল, “না। আমি যাচ্ছি অনেক দূরে।” জিজ্ঞাসা করলাম, “কোথায়?” সে তেমনি হাসতে হাসতে জবাব দিল, “আপাতত দিল্লি। তারপর সীমান্ত।”

আরো পড়ুন-  শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি প্রবন্ধ রচনা PDF

নতুনের সঙ্গে বন্ধুত্ব

জানতে পারলাম, সেই বলিষ্ঠ যুবকের নাম অসীম, সে সীমান্ত-প্রহরী। বাবা-মা কেউ নেই। ছিল একটি বোন। কয়েক মাস আগে তারও বিয়ে হয়ে গেছে। তার এবার কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাবার পালা। গল্পে-গল্পে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব জমে উঠল আমার। সকাল হল। মা-বাবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম অসীমের। তাঁরা অসীমের কথায়-বার্তায় এবং অমায়িক ব্যবহারে মুগ্ধ হলেন। তারপরের দিন আগ্রা ফোর্ট স্টেশন আসার আগেই হঠাৎ অসীম বলে উঠল, “ওই দ্যাখো তোমার তাজমহল।” জানালা দিয়ে চেয়ে দেখলাম – আমার স্বপ্নের তাজমহল – যেন একটি বেলফুলের কুঁড়ির মতো সকালের শিশিরে স্নান করে আমার দৃষ্টির সম্মুখে ভেসে উঠেছে। গাড়ির গতি মন্থর হয়ে এল। আমরা নামবার জন্যে প্রস্তুত হলাম। অসীম দাঁড়িয়ে আমার সঙ্গে করমর্দন করল। জিজ্ঞাসা করলাম, “কলকাতায় আবার ফিরছ কবে?” অসীম বলল, “জানি না। এখন আমি মুক্ত-”

তাজমহল দর্শন

স্টেশনের বাইরে এসে টাঙায় চড়ে হোটেলে এসে উঠলাম। স্নানাহারের পর লম্বা ঘুম। ঘুম যখন ভাঙল, তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। টাঙায় মাত্র কয়েক মিনিটের পথ। তাজমহল, শাজাহানের অমর কীর্তি তাজমহল – আমার আশৈশব স্বপ্নের তাজমহল। যেন শ্বেত-মর্মরের পাতায় রচিত একটি কালজয়ী অমর কবিতা –

“হীরা মুক্তামানিক্যের ঘটা

যেন শূন্য দিগন্তের ইন্দ্রজাল ইন্দ্রধনুচ্ছটা

          যায় যদি লুপ্ত হয়ে যাক,

              শুধু থাক্‌

          একবিন্দু নয়নের জল

  কালের কপোলতলে শুভ্র সমুজ্জ্বল

              এ তাজমহল।”

অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

পরদিন প্রভাতেই আমরা গেলাম আগ্রা-ফোর্টের উদ্দেশ্যে। ‘অমর সিং, দরওয়াজা’ দিয়ে প্রবেশ করে ‘জাহাঙ্গির মহল’ দেখে যেখানে বৃদ্ধ শাজাহান বন্দি-জীবন যাপন করেছিলেন, সেখান থেকে দেখলাম তাজমহলকে। দর্শনের অনুভূতি দূরে যমুনার তীরে এক টুকরো সাদা মেঘ নেমে এসেছে এই ধূলির পৃথিবীতে। ‘রাজা তারে ছেড়ে দিল পথ,/রুধিল না সমুদ্র পর্বত।’

উপসংহার

পরের দিন সম্রাট আকবরের নতুন রাজধানী ফতেপুর সিক্রি দেখে ফিরে এলাম। সেদিন সন্ধ্যার পর আবার গেলাম তাজমহল দেখতে। সেদিন ছিল পূর্ণিমা – কোজাগরি পূর্ণিমা। যেন জ্যোৎস্নার দুধের ধারা গড়িয়ে পড়ছে তাজমহলের গা বেয়ে। পিছনে যমুনা নদী। আমরা সেদিকের পৈঠায় বসেছিলাম। যমুনার জল অতি ধীরে বয়ে চলেছে। মনে হল, তা যেন সম্রাট শাজাহানের চোখের জল। ফেরার পথ সুদূর সীমান্ত-প্রহরী অসীমের কথা মনে পড়ছিল। তারও কোন পিছুটান নেই, সেও আজ মুক্ত।

আরো পড়ুন-  আমার জীবনের লক্ষ্য PDF - সহজ বাংলা রচনা

"একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা" ও তার উপলব্ধি বিষয়ক রচনাটির নমুনা এখানে দেওয়া হল। তোমরা নিজেদের মতো এটি তৈরি করবে।

অন্যান্য উপলব্ধি বিষয়ক বাংলা রচনা


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!