Last Update : February 15, 2022
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রবন্ধসূচিতে চার ধরণের প্রবন্ধ রয়েছে। যার মধ্যে একটি হলো বিতর্কমূলক রচনা। একটি সমাজ-সংশ্লিষ্ট বিষয় এক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হয়। দেওয়া থাকে সেই বিষয়ের পক্ষে কিছু যুক্তি। পরিক্ষার্থীকে সেই যুক্তি খণ্ডন করে করে সেই বক্তব্যের বিরুদ্ধ মত প্রতিষ্ঠা করাই হলো মূল কাজ।
পক্ষে
আধুনিক গতিশীল যুগে প্রতি মুহূর্তে মানুষের কাছে চলভাষ বা মোবাইল ফোন অবশ্য প্রয়োজনীয় এক উপাদান—প্রায় ছায়াসঙ্গী বলা যায়। জীবনের প্রতি মুহূর্তেই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বা বিশেষ কোনো প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য মোবাইল ফোন অপরিহার্য। অত্যন্ত দ্রুতগতির এই আধুনিক জীবনে সময়ের মূল্যকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে মোবাইল ফোন ছাড়া চলেই না। কেবল যোগাযোগের মাধ্যমেই নয়—মোবাইল ফোন ইনটারনেট ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন তথ্যসম্ভার হাতের মুঠোয় এনে দেয়। www.banglaguide.in
বিপক্ষে
আলোর নীচে যেমন অন্ধকার থাকে, তেমনই মোবাইল ফোনের সুফলের পাশে আছে কুফল। বর্তমান মানবজীবন ভোগবাদের মায়ায় আচ্ছন্ন। ভোগবাদী জীবনের শীর্ষে পৌঁছোতে মানুষ হারিয়েছে সুচেতনা। মোবাইলের ভালো গুণ নিতে গিয়ে সে নিচ্ছে খারাপও। পা দিচ্ছে মারণফাঁদে। আত্মরক্ষার অস্ত্র হাতিয়ার হয়ে উঠলে যেমন সভ্যতা নাশ হয়, এও তেমনই। মোবাইলের অপপ্রয়োগে তাই মানবসমাজ গতিবান ও আলোকপ্রাপ্ত হওয়ার বদলে গভীর আঁধারে ভরে উঠছে। সংক্রামক মারণব্যাধির মতো মোবাইল ছড়িয়ে যাচ্ছে সমাজে।
মোবাইলের রঙিন শরীর, আকর্ষক প্রযুক্তির হাতছানি মানুষকে ফাঁদে ফেলছে। কানে হেডফোন দেওয়া প্রজন্ম ফোনে কথা বলতে বলতে অসচেতনভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। এভাবে ট্রেন লাইন, বাস, ট্রাকে চাপা বা কাটা ইত্যাদি দুর্ঘটনা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে।
চলভাষে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ছাত্রসমাজ। তাদের শৈশব হারাচ্ছে স্বাভাবিকতা। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত গান, চলচ্চিত্র, অন্যান্য ভিডিয়ো ক্লিপিং-এর নেশায় আচ্ছন্ন হচ্ছে তারা। মাঠের খেলা, শরীরচর্চা ভুলে জড়িয়ে যাচ্ছে মোবাইল গেমসের নেশায়। এসএমএস-এর ফাঁদে আচ্ছন্ন তারা। পড়তে বসে, রাস্তাঘাটে বিশ্রামের সময়, ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে শুতে যাওয়া পর্যন্ত মোবাইল তাদের ও জীবনসঙ্গী। মোবাইল না পেলে আত্মহত্যার ঘটনাও দৈনিক কাগজে দেখা যাচ্ছে। অপরিণত মন না বুঝে জড়িয়ে যাচ্ছে নানান বিজ্ঞাপনী ফাঁদে। পণ্যের মোহ, লালসার উদ্রেক তাদের কিশোরমনকে বিকৃত করছে। মোবাইল নিঃশব্দে হয়ে উঠছে আগামীর ঘাতক। www.banglaguide.in
অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার মানুষের স্বাস্থ্যহানি করছে। মোবাইলের থেকে নির্গত ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক রশ্মি, ফোনের শব্দ মানুষের শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে ‘WHO’ প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী মোবাইল কান, পাকস্থলী, মস্তিষ্কে কর্কটরোগের (ক্যান্সার) অতিপ্রসারক। ফ্রান্সের মতো দেশ ছোটোদের মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। আবার বারবার মোবাইল সেট বদল করে সমাজে যে ই-বর্জ্য বেড়ে উঠছে, তা সামাজিক ব্যাধি।
মোবাইল তরঙ্গ পরিবেশের জীবকুলের জন্য বিপদ সংকেত। এই অদৃশ্য তরঙ্গ ক্ষুদ্র পাখি ও পতঙ্গের মস্তিষ্কে আঘাত করায় তাদের মৃত্যু ঘটছে। মোবাইল ধ্বনির তীব্রতা ও তরঙ্গাঘাত, মোবাইল টাওয়ার প্রভৃতি প্রকৃতির ভারসাম্য বিনষ্ট করছে। সস্তায় মোবাইল পাওয়ার লোভকে হাতিয়ার করে নন-ব্রান্ডেড মোবাইল ছেয়ে ফেলেছে বাজার। যা সম্পূর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে দেশের বিক্রয়কর ফাঁকি দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে তুলছে।
সমাজের চারপাশে ক্রমে বেড়ে চলা অপরাধ সংগঠিত করতে, কখনও বিস্ফোরক বোমা, কখনও মুক্তিপণ চাওয়ার হাতিয়ার, কখনও ব্ল্যাকমেলের মাধ্যমে জনজীবনকে উত্যক্ত করতে মোবাইল এখন আধুনিক সভ্যতার প্রধান হাতিয়ার। সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যে দেখা গিয়েছে কোনো মানুষের কাছে রয়েছে ১০০টিরও বেশি সিমকার্ড। দুটো-তিনটে সিম তো প্রায় সকল মোবাইল ব্যবহারকারীর কাছেই সহজলভ্য। সিমবদল যেমন অপরাধীদের শনাক্ত করতে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে, তেমনই মানুষ ভুলে যাচ্ছে মোবাইল নিত্যব্যবহার্য গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ উপাদান। নিছক বিনোদনের প্রবণতা সভ্যতাকে বিকৃত, কুরুচিসম্পন্ন এবং ধ্বংসাত্মক পথে নিয়ে যাচ্ছে। www.banglaguide.in
[উচ্চমাধ্যমিক ২০১৬]
অন্যান্য বিতর্কমূলক রচনা নিচে